নতুন বাবু দেখতে যাওয়ার আদবকেতা
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date March 15, 2024
- Comments 0 comment
নতুন শিশুকে দেখতে যাওয়া খুব সুন্দর একটা কালচার,নতুন মা বাবার সাথে সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। কিন্তু অনেক সময় আমরা বেখেয়ালে এমন কিছু ভুল করে ফেলি যা শিশু ও তার পরিবারের জন্য কষ্ট বা বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। গেস্ট একটু খেয়ালি হলে আনন্দের ব্যাপারটা বিরক্তিতে রুপ নেয়না বরং আরো বেশি আনন্দের হয় । আসুন জেনে আসি তেমন কিছু আদবকেতা –
আমাদের মনে রাখতে হবে ; লম্বা প্রেগন্যান্সি, লেবার ও ডেলিভারী পর্বের পর নতুন মা খুবই ক্লান্ত ও বিদ্ধস্ত, সেই সাথে এই শরীরেই তার শুরু হয়ে গেছে নতুন শিশুর দ্বায়িত্ব। নতুন মা ও শিশুকে নিয়ে ওই বাসার মানুষও কাজের মধ্যে দৌড়ের উপর আছে। তারাও হাসপাতাল বাবুর ও মায়ের কেয়ার গিভিং করতে করতে ক্লান্ত। আর এখন সব পরিবারেই মানুষজন কম, হেলপিং হ্যান্ডও পাওয়া যায়না, তাই এক দুই জনের উপরেই দেখা যায় অনেক দায়িত্ব পরে।
একদম নতুন অবস্থায় যেহেতু মা ও শিশু দুজনেই সেন্সিটিভ থাকে, আমরা চেষ্টা করবো প্রথম ১০/১৫ দিনের মধ্যে ওই বাসায় না যেতে। তাদের একটু স্যাটেল হতে সময় দিবো। হুট করে চলে যাবোনা, ফোন করে জানিয়ে যাবো। ঠান্ডা, জ্বর বা কোন অসুস্থতা থাকলে এর মধ্যে বাচ্চা দেখতে যাবোনা। বাচ্চার রুমে যাওয়ার আগে হাত-পা ধুয়ে নিবো।
যেহেতু ওই বাসার মানুষরা এমনিতেই ব্যাস্ত, ক্লান্ত আমরা তাদের ঝামেলা আরো বাড়িয়ে দিবোনা। ওই বাসায় গিয়ে বেশি সময় বসবোনা, আধাঘন্টা থাকাই যথেষ্ট। সারাদিন বা বেশি দিনের জন্য গেলে এমন মাইন্ড সেটাপ নিয়েই যাবো যে আমরা তাদের হেল্প করবো, তাদের কাজ সহজ করে দিবো। তাদের মাথার উপর মেহমান হয়ে বসবোনা। কী আপ্যায়ন করলো কী করলোনা এসব নিয়ে ছোটলোকের মত কমপ্লেইন করবোনা।
রোগী দেখতে যাওয়া অনেক বড় ইবাদত। আমরা চাইবো নতুন মাকে দেখতে যাওয়াটা যেন আমাদের ইবাদত হয়ে যায়।
মায়ের এ সময় পুষ্টিকর খাবারের অনেক চাহিদা থাকে। এদিকে মা দুর্বল তাই সেভাবে রান্না করেও ভাল খেতে পারছেনা। আপনি ওই বাসায় যাওয়ার সময় কম মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার নিয়ে যেতে পারলে ওই বাসার মেম্বারদের এবং মায়ের খুব উপকার হয়। মায়ের জন্য সুপ বানিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সাগু রান্না করে নিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া বাদাম, খেজুর, ফল এগুলো কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
যে নবজাতক সে কিন্তু গিফটের কিছুই বোঝে না, যুদ্ধটা করে আসছে মা, গিফট তার প্রাপ্য। আর বাজারে যেসব বাচ্চাদের জামা পাওয়া যায় ওগুলো বেশিরভাগই খসখসে কাপড়ের, বাচ্চাদেরকে পরানো যায় না। বাচ্চার জন্য কোন কসমেটিক্স দিলেও আজকাল মানুষ সেগুলো ইউজ করতে চায় না। এরচে আমরা মাকে তার পছন্দের কোন কিছু গিফট দিতে পারি, যেমন মায়ের এখন শারীরিক পরিবর্তনের জন্য আর ফিডিং এর জন্য নতুন পোশাক প্রয়োজন, তাই মাকে আরাম কাপড়ের কিছু থ্রি পিস বা ফিডিং ফ্রেন্ডলি জামা গিফট করতে পারি।
বাচ্চার জন্য এমন কিছু গিফট করতে পারি যেগুলো বাচ্চা পালনে সহজ হয়, যেমন বেবি রকার, স্ট্রলার, বেবি ক্যারিয়ার, ডায়পার ব্যাগ, আরেকটু বড় বেবি হলে হাই-চেয়ার এসব। এগুলো ইউজ করে মা যখন একটু রিলাক্স পাবে তখন তার আপনার কথা মনে পরবে।
আবার যেহেতু এগুলো ইউজ করার সময় মায়ের কাজগুলো একটু সহজ হয়ে যাবে, তখন কারো সাহায্যে আসার সওয়াব নিশ্চয়ই আপনি পেয়ে যাবেন।
হাজবেন্ড ছাড়া অন্য ছেলে মানুষ, যত ক্লোজ মারহামই হন না কেন, মায়ের পাশে বেশিক্ষন বসে থাকবেন না। বাচ্চার মা জরায়ুর কন্ট্রাকশন পেইন, কাটার ব্যথা, কনস্টিপেশন, আরো বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তিতে থাকে। আবার তখন বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময়ও হয়ে যেতে পারে। তখন সে ঠিকমত মুভ করতে পারে না আবার আপনাকে কিছু বলতেও পারছে না ব্যাপারটা খুবই অস্বস্তিকর।
ফিডিং করতে গিয়ে নতুন মায়ের পিঠ ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, কোমর ব্যাথা, ঘুম না হওয়ায় মাথাব্যাথা হয়ে যায়, আমরা নারী আত্নীয় যারা যাব তারা যদি মাকে একটু রিলাক্সিং ম্যাসাজ করে দিতে পারি তাহলে মা’ টা একটু আরাম পাবে এবং ভেতর থেকে আপনার জন্য দুয়া আসবে।
বাচ্চার দুধ খাওয়ার সময় মা ও বাচ্চার সামনে থেকে সরে যাবো, তাকে প্রাইভেসী দিবো।
এটা যদি দ্বিতীয় বাচ্চা হয়, তাহলে বড় বাচ্চাটাকে কখনোই ‘এখন তোমার আদর কমে গেল’ এই টাইপ কথা বলবো না। এমনিতেই বড় বাচ্চাগুলা নতুন শিশু আসলে এটেনশন পাওয়ার জন্য বেশি জ্বালায়, এসব বলে বাচ্চাকে ইন্সিকিউরিটিতে ফেলে বাবা মায়ের ঝামেলা আরো বাড়িয়ে দিবোনা।
আমরা মনে আনন্দ নিয়ে যাই নতুন বাবু দেখতে। তাই এমন কোন জাজমেন্টাল কথা বলবো না যেটায় নতুন মা বাবা মনে কষ্ট পাবে। বাচ্চার জেন্ডার, স্কিন কালার, চুল, মোটা না শুকনো এসব নিয়ে/বাচ্চার ফর্মুলা খাওয়া, ডায়পার পরানো/ সিজার হলো কেন, নরমাল হলোনা কেন এমন কিছুই বলবোনা। খুশির সময়ে গিয়ে মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে গুনাহ কামিয়ে আসবোনা।
যেচে পরে উপদেশ দেয়া বা ভুল ধরার দরকার নেই। এখন ইন্টারনেটের যুগে সবাই এক্সপার্ট অপিনিয়ন সার্চ করে জেনে নেয়।
আসলে এসময় সবাই এতো উপদেশ দেয় যে মা বাবা কনফিউজড হয়ে যায়, সাথে বিরক্তও। এরচে আপনাকে তাদের পছন্দ হলে ওরা নিজেরাই কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করে নিবে। আর পছন্দ না হলে আপনি কিছু বললে আরো বিরক্ত হবে। কী দরকার অন্যের বিরক্তির কারন হওয়ার!
আমরা ক্লান্ত বিদ্ধস্ত মা’কে প্রশংসা সূচক বাক্য বলবো, কংগ্রেচুলেট করবো। বলবো তাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে, মা হওয়ার পর সে গ্লো করছে। বলবো নিশ্চয়ই সে অনেক ভালো একটা মা হবে। একটু প্রশংসা মায়ের ক্লান্তি, ভয় দূর করে দিতে পারে অনেকখানি।
আমরা ফিরে আসার সময় বলে আসবো যে কোন সাহায্যের প্রয়োজনে যেন নতুন মা বাবা তাদের জানায়।
এভাবে আমরা জেন্টল ওয়েতে একটা নতুন শিশুকে সুন্দর ভাবে ওয়েলকাম করতে পারি। 🙂
তামান্না তাবাসসুম
লেখক ও শিক্ষক
রৌদ্রময়ী প্রিনেটাল এসোসিয়েট ও পার্টিসিপ্যান্ট
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …