গর্ভবতী ও ল্যাকটেটিং মায়েদের রমাদান
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date March 13, 2024
- Comments 0 comment
রমাদানে গর্ভবতী ও ছোট বাচ্চার মায়েরা নিজের এবং সন্তানের পুষ্টির পাশাপাশি ইবাদাত নিয়ে অনেক চিন্তিত হয়ে পরেন। অথচ এতো চিন্তার কিছুই নেই। রমাদান শুরুর আগেই ছোট একটা রুটিন করে নিলে সবকিছু অনেক সহজ হয়ে যায়।
যদিও গর্ভবতী এবং ল্যাকটেটিং মায়েদের রোযা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। তবুও সুস্থ-স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সিতে রোযা রাখলে, প্রেগন্যান্সি বা ব্রেস্ট ফিডিং বাচ্চার পুষ্টিতে ঘাটতি হবে না, ইন শা আল্লাহ। কিন্তু হাই-রিস্ক প্রেগন্যান্সিতে ডাক্তারের পরামর্শ মতেই চলা উচিত।
সকল গর্ভবতী ও ল্যাকটেটিং মায়েদের জন্য যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা হলো –
♦ ইফতারের পর থেকে সাহরীর সময় পর্যন্ত ২-৩ লিটার পানি অবশ্যই পান করতে হবে।
♦ভাজাপোড়া একেবারেই খওয়া যাবে না। খেলেও পরিমাণে খুবই অল্প। তবে আমি সাজেস্ট করবো, একদমই না খাওয়ার জন্য। কারণ এ ধরনের খাবার প্রচুর গ্যাস তৈরি করে। গ্যাস থেকে বুক জ্বালাপোড়া, কন্সটিপেশন, পেটে ব্যাথাও হতে পারে।
♦ ইফতারী শুরু করবেন অবশ্যই খেজুর দিয়ে। এরপর এক গ্লাস সাদা পানি পান করুন। শরবত খেলে, সাদা চিনি অবশ্যই পরিহার করবেন। ইফতারীতে রাখবেন রসালো ফল – তরমুজ, বাঙ্গি, কমলা, কলা, পেয়ারা ইত্যাদি। ফলের রস করেও খেতে পারেন। তবে চিবিয়ে খেতে পারলে বেশি ভালো হয়।
♦ ১-২ টা খেজুর, ২-৩ গ্লাস পানি এবং কিছু পরিমাণে রসালো ফল খাওয়ার পরেই দেখবেন পেট অনেকটাই ভরা লাগছে। এরপর মাগরিবের সালাত আদায় করে নিন।
♦ একবারে অনেক খাবার খেয়ে নিবেন না। সারাদিন রোজা রাখার কারণে আপনার পাকস্থলী একসাথে এতো খাবারের চাপ নিতে পারবে না। তাই অল্প অল্প করে কিছু সময়ের ব্যবধানে খাবার খেতে হবে।
♦ নামাজ পরার পর দেখবেন আবার হালকা ক্ষুদা ভাব আসছে। এখন আপনি একটু প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান। ইফতারীতে ডিমের সালাদ, বা হালকা তেলে ডিম ভাজা রাখতে পারেন। ডিম প্রোটিনের ভালো একটা উৎস।
♦ ইফতারীতে, এ পরিমাণ খাবার আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। এর মাঝে মাঝে পানি পান করতে থাকবেন। যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে, তারা হালকা লিকার দিয়ে চিনি ছাড়া রং চা খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত গরম পরলে চা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
♦ একটু বিশ্রাম এবং ইবাদাতের পর তারাবীহ পরে নিয়েই রাতের খাবার সেরে নিবেন। রাতের খাবারে রাখতে পারেন মাংস বা মাছ, ডাল, সবজি। একটু বাদামও খেতে পারেন।
♦ অনেক সময় ঘুম থেকে উঠামাত্রই কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। তাই রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে, সাহরীতে ৪০-৫০ মিনিট আগে উঠে একটু সালাত আদায় করে এরপর সাহরী খেয়ে নিতে পারেন। সাহরীতে দুধ এবং খেজুর অবশ্যই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। দুধ এবং খেজুর বডি হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। এতে করে রোযা রাখতে সুবিধা হবে।
♦সহজ এবং কম সময় লাগে এমন সব রান্না করার চেষ্টা করবেন। একবার তরকারী রান্না করে নিলেই সেটা দিয়েই ইফতার, ডিনার এবং সাহরী যেন করে ফেলা যায় সে চেষ্টা করবেন। এতে করে পরিশ্রম কম হবে এবং ইবাদাতেরও সময় পাওয়া যাবে।
♦ ছোলা, বাদাম, চিয়া সিড, ডাবের পানি, সবুজ সবজি এ সমস্ত খাবার গুলোও নিজের রুচি এবং চাহিদা অনুসারে মাঝে মাঝে খেয়ে নিতে পারলে ভালো হয়।
♦ অতিরিক্ত বমির সমস্যা থাকলে বা খুব বেশি দুর্বল লাগলে সেক্ষেত্রে রোযা না রাখতে পারলে, বেশি বেশি ইবাদাত করে নিবেন।
আর ট্রাইমেস্টার ভিত্তিতে কিছু বিষয় যা খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো-
🌺 যারা ১ম ট্রাইমেস্টারে আছেন:
এ সময়টা অনেক বেশি বমি বমি ভাব থাকে। খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে রুচি তেমন একটা থাকে না বললেই চলে। তাই রুচি রাখার জন্য ইফতারের পর থেকে মুখে একটু আলু বোখারা দিয়ে রাখতে পারেন। রাতে বা সাহরীতে ভাতের সাথে টক দই খেতে পারেন। ইফতারীতে একটু টক জাতীয় ফল রাখতে পারেন। তবে যাদের বমি হয় তারা সাহরীতে টক দই না খেয়ে ইফতারীতে খাবেন। এ সময় অনেক বেশি খেতে হবে এ কনসেপ্টটা ভুল। তাই আপনি যতটুকু খেতে পারবেন তাই যথেষ্ট। অতিরিক্ত খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
🌺 ২য় ট্রাইমেস্টারে যারা আছেন –
ইফতার থেকে সাহরীর সময়ের মধ্যেই যেন সারাদিনের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ এর চাহিদা পূরণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আয়রণ এবং ক্যালসিয়াম এর ওষুধ একই সময়ে না খেয়ে আলাদা সময় খেয়ে নিবেন। এ সময়টা রোযা রাখতে সবচেয়ে সুবিধা।
🌺 যারা ৩য় ট্রাইমেস্টারে আছেন –
এ সময় বাবুর মুভমেন্ট ভালোভাবে বোঝা যায়। তাই সারাদিনে ১০-১২ বার নড়ছে কি না মনোযোগ সহকারে কাউন্ট করবেন। অতিরিক্ত চিনি, লবন এবং তেল যুক্ত খাবার অবশ্যই এভয়েড করবেন। শেষের সময়ে ডায়বেটিস বা প্রেশার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে চিন্তার কিছু নেই। অনেক ক্ষুদা লাগার কারণে রোযা রাখতে না পারলে, ইবাদাতে মনোনিবেশ করবেন।
🌺 ল্যাকটেটিং মা যারা আছেন –
লাউ, শিং মাছ, চালকুমড়া, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাবেন যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বডিতে থাকে। মানসিকভাবে রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করবেন। এতে মিল্ক প্রডিউস সহজ হয়।
রমাদান মাত্র ৩০ দিন। চোখের পলকেই দিনগুলো চলে যায়। একটু সবর এবং মানসিক স্হিরতা নিয়ে ইবাদাতে মনোযোগ দিলেই প্রেগন্যান্সিতেও রোযা রাখা সহজ হয়ে যায়। তবে দুর্বলতার কারণে রোযা রাখতে না পারলেও মন খারাপের কিছু নেই, পরবর্তীতে কাযা করে নেওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। এ সময়ে ইবাদাত ও দান সাদাকার বিনিময়েও অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে, ইন শা আল্লাহ।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং প্রিনেটাল কোর্স ম্যাটেরিয়াল থেকে খাদ্যের পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে মায়েদের জন্য রমাদান খাদ্যাভ্যাসের একটি রুটিন দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি এ থেকে অনেক মায়েরা উপকৃত হবেন, ইন শা আল্লাহ।
ইশরাত জাহান তৃষা
প্রিনেটাল এসোসিয়েট ও পার্টিসিপ্যান্ট, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …