প্রেগন্যান্ট এবং ল্যাকটেটিং মায়েদের রামাদান মিল প্ল্যান
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date March 23, 2024
- Comments 0 comment
সুমি নতুন মা। বাবুর বয়স চার মাস। বাবু দুধ পাবে কি না এটা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদন্দ থাকলেও আর সবার সাথে এ বছরের প্রথম রোজাটা রাখলো সুমি। ইফতারের আয়োজন করলো ট্যাং এর শরবত, পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা বুট, মুড়ি, জিলাপি দিয়ে।
ইফতারের সে খুব বেশী কিছু খেতে পারলো না, অল্প ভাজাপোড়া খেয়ে উল্টো এসিডিটি হয়ে গেলো। এতসব ঝামেলায় খেয়াল ছিল না, বাবু অনেকটা সময় হয়ে গেলো পিসু করেনি। সুমি হঠাৎই ভয় পেয়ে গেল, তাহলে কি বাবু দুধ পাচ্ছে না!
সুমির মনে হলো, তাহলে কি আর রোজা রাখা যাবে না? কিছুই বুঝতে পারলো না, সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগল। একদিকে বাবুর চিন্তা অন্যদিকে রোজা না রাখতে পারলে আমলের ঘাটতি, সারাটা বছর তো সে রোজার জন্য অপেক্ষা করে।
কি মনে হয়, সুমি কি রোজা রাখতে পারবে?
আপনাদের কারও অবস্থা কি সুমির মত হয়েছে?
আজকে আলোচনা করছি রোজায় একজন গর্ভবতী মা বা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা কিভাবে রোজা রাখবেন। তার সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত মিল প্ল্যান কেমন হবে। সেই সাথে কিছু টিপস যা অবলম্বন করলে আশা করা যায় দুধের ফ্লো কমবে না।
মোটকথা মা রোজার আগে যা খেতেন এখনও তাই খাবেন সময়টা শুধু পরিবর্তন হবে।
ইফতারে ভাজাপোড়া না খেয়ে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নিচে আমি কিছু মিল প্ল্যান উল্লেখ করছি। পরিমাণটা অবশ্যই এক একজনের জন্য একেক রকম হবে। তবে আইডিয়া পাবেন সকলেই। খাবার প্ল্যান করার সময় প্রোটিন, শাকসবজী এবং তরল খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সবাই ট্রাডিশনাল ইফতার করলেও এটার সাথে আপনি নিজের জন্য আলাদা করে কিছু রাখতে পারেন।
♦ইফতার
মেনু ১ঃ দই চিড়া
মেনু ২ঃ মুরগি, শসা, টমেটো, গাজর, টকদই ও গোলমরিচের গুড়া দিয়ে তৈরি সালাদ
মেনু ৩ঃ সবজী ও মুরগির সুপ
মেনু ৪ঃ ছোলা বুট ও শসার সালাদ
মেনু ৫ঃ দুধ দিয়ে তৈরি ডেজার্ট যেমন পুডিং, দুধ সাগু, দুধ দিয়ে ওটস
মেনু ৬ঃ অল্প মশলায় চাল ডালের খিচুড়ি ও ডিম ভাজি
মেনু ৭ঃ সবজী, মুরগি দিয়ে বানানো নুডলস বা পাস্তা।
কিছু টিপসঃ
১. ইফতারে ট্যাং বা চিনি দিয়ে লেবুর শরবতের পরিবর্তে টকদই, লেবু ও একটু লবন দিয়ে শরবত বা ডাবের পানি খেতে পারেন। অতিরিক্ত চিনির শরবতে আসলে পু্ষ্টিকর কিছুই থাকে না। এটি রুচি নষ্ট করে। সেই সাথে, ফলের রস না খেয়ে আস্ত ফল খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
২. ইফতারে একটি করে সেদ্ধ ডিম রাখতে পারেন।
৩. ইফতারে এবং সেহরির পর দুধ সাগু, দুধ দিয়ে ওটস ও সাথে কিছু বাদাম এই খাবারটা রাখতে পারেন। এটা দুধের ফ্লো বাড়াবে।
৪. মেথি/ মৌরি ভিজানো পানি খেলেও দুধের ফ্লো বাড়ে। ১ চা চামচ মেথি হাফ কাপ পানিতে ভিজিয়ে ইফতারের পর থেকে ১ চুমুক করে খেতে পারেন।
৫. ভাজাপোড়া খাবারগুলো আপনারে পেটে জায়গা দখল করবে কিন্তু কোন পুষ্টির জোগান দেবে না। গর্ভের বাচ্চার স্বাস্থ্য ও বুকের দুধ তৈরিতে কোন সাহায্য করবে না। তাই এগুলো যথাসম্ভব কম করে খাবেন। খেলেও আগে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে তারপর অল্প কিছু খেতে পারেন।
৬. গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েরা রাতের খাবার বাদ দিবেন না। অল্প ভাত, সবজী, মাছ/মুরগি এভাবে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৭. ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত ২-৩ লিটার পানি পান করবেন। প্রয়োজনে ২ লিটারের একটা বোতলে পানি নিয়ে সাথে রাখবেন। টার্গেট থাকবে পুরোটা শেষ করার।
মিল প্ল্যানটা হবে এরকম যে আপনি ইফতারে একটা হেলদি নাস্তা খাচ্ছেন, এরপর রাতের ভারী খাবার এবং সেহরি। ঠিক যেমন সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার।
♦সেহরি
সেহরির সময় খাবারটা সহজপাচ্য হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এক্ষেত্রে ঝোল জাতীয় সবজী যেমন লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, পটল রাখতে পারেন।
প্রোটিনের চাহিদা পুরনের জন্য কম মশলাদার মাছ, মুরগি, গরুর মাংস, ডাল, শীমের বিচি এগুলো রাখতে পারেন।
সেহরির সময় অনেকে একটি ভুল করে যে একসাথে অনেক পানি খেয়ে নেয়। এটা করলে একটু পরই সব পানি ইউরিনের সাথে বের হয়ে যায়। এসময় বেশী পানি খেলে যে তৃষ্ণা লাগবে না ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। একসাথে বেশি পানি না খেয়ে যেসব খাবারে পানির পরিমান বেশী যেমন ডাল, শসা, লাউ জাতীয় সবজি, দুধ এসব খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। তাহলে শরীরের পানির চাহিদা পুরন হবে।
ইফতারে ও সেহরির সময় মা যদি নিজের খাওয়া দাওয়ার প্রতি খেয়াল না রাখেন তখন পানিশূন্যতা, কন্সটিপেশন, ম্যাথা ব্যাথা, বদহজম, এসিডিটি হতে পারে। এজন্য প্রতিদিনের খাবারে যেন ফাইবার বা আঁশ ও পানি থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
এই গরমে পানি শূন্যতা রোধ করার জন্য যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা জরুরি:
☑ ঠান্ডা পানি, শরবতের পরিবর্তে কুসুম গরম সুপ, পানি, রসালো সবজি যেমন শসা ও ফল যেমন তরমুজ খেলে দ্রুত শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয়।
☑ অতিরিক্ত লবন ও মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। কারন এগুলো হজম করার জন্য বেশী পানির প্রয়োজন হয়।
☑ মিষ্টি জাতীয় খাবার ও ডেসার্ট তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়৷ এর পরিবর্তে পরিমিত পরিমাণে ফল খাওয়া যেতে পারে।
☑ চা, কফি, চকলেট ক্যাফেইন এ জাতীয় খাবারগুলো শরীর থেকে পানি বের করে দেয় এবং তৃষ্ণা বাড়ায়। ইফতার সেহরির পর পরই এসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
☑ বাইরে রোদে বা ঘরে অতিরিক্ত কাজ করলে ঘাম হবে এবং পানির চাহিদা বাড়বে। প্রেগন্যান্ট ও দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের রোজা রাখা অবস্থায় অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলা উচিত।
পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য প্রেগন্যান্ট ও ল্যাকটেটিং মায়েদের সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়। সাপ্লিমেন্টের সাথে যদি অন্যান্য ওষুধ থাকে সেটা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধের সময় এবং ডোজ ঠিক করে নেওয়া উচিত।
📌 আয়রন: আয়রন খালি পেটে খেলে শোষণ বেশি হয় এজন্য ইফতারের শুরুতে খালি পেটে বা হালকা কিছু খেয়ে আয়রন সাপ্লিমেন্টটা নিতে পারেন। সাথে মালটা, কমলা ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাবেন। ইফতারের পর পরই চা কফি খাওয়া যাবে না কারন এটা আয়রন শোষণে বাধা দেয়।
📌 ক্যালসিয়াম : ক্যালসিয়াম ও আয়রন একসাথে খাওয়া উচিত নয়। কমপক্ষে ২ ঘন্টা বিরতি দিয়ে খাওয়া উচিত। দুটো একসাথে খেলে শরীরে শোষিত হয় না। ক্যালসিয়াম দুধ জাতীয় খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে। রাতের খাবার বা সেহরিতে দুধ/ টকদই রাখলে এসময় ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।
সবশেষে বলবো, যদি আপনার শরীরের কন্ডিশন এমন থাকে যে রোজা রাখা আপনার ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাহলে রোজা না রাখলেও চলবে। এই বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এবং উপযুক্ত সোর্স থেকে মাসালা জেনে নিবেন।
ফারইয়াব হাসান
নিউট্রিশনিস্ট
দৌলা, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …