কিভাবে বুঝবেন আপনার ডাক্তার নরমাল ডেলিভারি সাপোর্টিভ কি না?
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date June 15, 2024
- Comments 0 comment
আমাদের দৌলা সার্ভিসের ক্লায়েন্টদের অনেকের সাথে এমন হয়েছে যে একজন ডাক্তার দেখাচ্ছেন, যিনি হয়ত নরমালের আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্ত দেখা গেল ইডিডির দিন বললো সি সেকশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আপনি হয়ত আরেকটু অপেক্ষা করতে চাচ্ছিলেন কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে ফ্যামেলির কেউ আর রাজী হল না। পরবর্তীতে রিস্কের কথা চিন্তা করে আপনার সি সেকশন করা হল।
আবার দেখা গেল আপনার হয়ত পানি ভেঙেছে, সাধারণত পানি ভাঙার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ন্যাচরালি ব্যাথা উঠে, সে সময়টা আপনাকে দেওয়া হল না। ঠিক সেই সময় আরেকজন ডাক্তারের কাছে যেয়ে সেকেন্ড অপনিয়ন নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। আজকে সেই স্টেপগুলো বলে দিচ্ছি যেই ভাবে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলে হয়ত নরমালের ব্যাপারে উনি সাপোর্টিভ হবে কি না আগে থেকে বুঝতে পারবেন। এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
✳️ আপনি ডাক্তারের সাথে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? আপনার কথা উনি মনোযোগ দিয়ে শুনেন কি না? অথবা বিরক্ত বোধ করছেন কি না?
– ডাক্তার যদি অসম্ভব ব্যস্ত হয়ে থাকেন, আপনাকে সময় না দেন, আপনার সমস্যাগুলোর কথা না শুনে, বা যদি তার সাথে সমস্যার কথা বলার ব্যাপারে ভরসা না পান, বললে উনি বিরক্ত হন তাহলে অন্য একজন ডাক্তার দেখাতে পারেন।
✳️ ডাক্তারের সি-সেকশন ও নরমাল ডেলিভারি করানোর শতকরা হার কেমন? এ বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন না করে উনার অন্য রোগী বা হাসপাতালে খোঁজ নিতে পারেন।
✳️ ইডিডি পার হলে, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে আর কতদিন অপেক্ষা করা যাবে?
– সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ইডিডির পরও অপেক্ষা করা যায়, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
✳️ নরমাল ডেলিভারিতে এপিসিওটমি দিয়ে থাকেন নাকী প্রয়োজন না হলে দেন না।
( অনেক ডাক্তার এপিসিওটমি ছাড়া নরমাল ডেলিভারি করাতে রাজী হন না। এটা আগে থেকে জেনে রাখা ভালো।)
✳️ লেবারের সময় খাওয়া দাওয়া, নিজের ইচ্ছে মত হাঁটা চলা করা যাবে কি না? সাথে কাওকে রাখা যাবে কিনা।
– লেবারের সময় হাইড্রেটেট থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় খাওয়া দাওয়া না করলে পরে পুশিং এর সময় মা এনার্জি পান না। আর হাঁটা হাটি, এক্সারসাইজ করলে লেবার তাড়াতাড়ি প্রগ্রেস করে। কেউ সাথে থাকলে এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে পারে। মানসিক দিক থেকেও সাহস পাওয়া যায়।
✳️ ইন্ডাকশনের ব্যাপারে উনার মতামত কী, মেমব্রেন সুইপ, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জেল এগুলোর প্র্যাকটিস আছে কি না? ইডিডি পার হয়ে গেলে ইন্ডাকশন দিয়ে ব্যাথা উঠানো যায় কিনা।
– শরীর প্রস্তুত হওয়ার আগে ইন্ডাকশন কাজ না করার সম্ভাবনাই বেশি। অনেকের ইডিডি পার হয়েও ব্যাথা না উঠলে তখন ইন্ডাকশনে কাজ হয় এবং ব্যাথা উঠে নরমাল ডেলিভারি হতে পারে।
✳️ আপনি যদি ন্যাচরাল ডেলিভারির প্রতি আগ্রহী হন তাহলে ন্যাচরালের বিষয়গুলো যেমন স্যালাইন, পিটোসিন না দেওয়া, স্কিন টু স্কিন কনটাক্ট, দেরীতে কর্ড কাটা এসব বিষয়ে উনি কতটা সহযোগিতা করবেন সে বিষয়ে জানতে চাওয়া।
– এখন অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে। ডাক্তারের সাথে আগে থেকে কথা বলে রাখলে অনেকে সাপোর্ট করেন। এমনকি জেন্টেল সিজারিয়ান এর ব্যাপারটাও জানিয়ে রাখা যেতে পারে।
✳️ বার্থপ্ল্যান লিখে নিয়ে গেলে সেটা ফলো করা হবে কি না।
✳️ পাশাপাশি যে হাসপাতালে ডেলিভারি হবে সেইখানের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা খোঁজ খবর নিতে পারেন। লেবার রুমে অন্য কাওকে থাকতে দিবে কি না। খাবার খেতে দেয় কি না। পিটোসিন, এপিসিওটমি এগুলো রুটিন প্র্যাকটিসের মধ্যে পড়ছে কি না। হাসপাতালে এন আই সিইউ ব্যবস্থা আছে কিনা। এই ব্যবস্থা না থাকলে অনেক ডাক্তার লং লেবারের কোন রকম রিস্ক না নিয়ে সি সেকশনের কথা বলতে পারেন।
বাংলাদেশে এখন অনেক ডাক্তারই আছেন যারা আন্তরিক ভাবে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করেন। আমি শ্রদ্ধার সাথে বলতে চাই অনেকের প্র্যাকটিসে আবার সি সেকশনের হারটা বেশি থাকে। উপরের প্রশ্নগুলো একসাথে না করে, একটা দুইটা উপযুক্ত প্রশ্ন করলে ডাক্তারের মনভাব সম্পর্কে বুঝে নিতে পারবেন।
কোন কারনে যদি উনার উত্তর সন্তোষজনক না হয় তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন। আগে থেকেই কিছুটা যাচাই বাছাই করে যেতে পারেন। নিজেকে যতটা লো রিস্ক ক্যাটাগরিতে রাখতে পারবেন ততটাই ডাক্তারের সাপোর্ট পাবেন। আপনি যেমন চাইবেন সার্ভিস ও সেভাবেই পরিবর্তন হবে। মানুষের আগ্রহের জন্য এখন নরমাল ডেলিভারি এমনকি ন্যাচরাল বার্থও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আপনার জন্য উপযুক্ত ডাক্তার, হাসপাতাল আপনাকে খুঁজে নিতে হবে। মনে রাখবেন, একজন ডাক্তার হাজার হাজার ডেলিভারি করান, উনার জন্য এটা নিত্যদিনের ঘটনা। আপনার ডেলিভারি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘটনা সারাজীবন মনে থাকবে, এর উপর আপনার ও আপনার সন্তানের ভালো থাকা নির্ভর করছে। এই বিষয়টা নিয়ে আপনার হাসবেন্ড ও পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করবেন এবং ব্যাপারটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন।
ফারইয়াব হাসান
দৌলা,রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …