বাবুর মায়েদের লাইলাতুল ক্বদর
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date April 3, 2024
- Comments 0 comment
ছোট বাবু নিয়ে লাইলাতুল ক্বদরে রাত জেগে ইবাদত করা একটু কষ্ট হয়ে যায়। আবার বাচ্চার চিন্তা মাথায় নিয়ে নামাজে মনোযোগ দেয়া যেন আরও কষ্টসাধ্য মনে হয়।
কিন্তু, মাত্র ১০টা রাত এর কথা চিন্তা করলেই দেখবেন ভিতর থেকে একটা এনার্জি চলে আসে।
সবার প্রথমে এ ১০ দিন মোবাইল খুবই কম ব্যবহার করবেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরাঘুরি, অনলাইন শপিং এগুলোতে অযথা সময় ব্যয় করবেন না।
কারও বাবু রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে, আবার কারও বাবু রাত ২-৩ টায় ঘুমায়। বাবু যখনই ঘুমায়, সে সময় থেকে প্রথম ৩০-৬০ মিনিট একটু গভীর ঘুম দেয়। এ সময়টাকে রাতের নামাজের জন্য কাজে লাগাতে হবে।
বাবুর গায়ে মায়ের একটি ওড়না দিয়ে সুন্দর করে ঢেকে দিবেন, যেন ঘুমের মধ্যে সে মনে করে মা পাশেই আছে। ওড়না থেকে মায়ের গায়ের কিছুটা হলেও ঘ্রাণ সে অনুভব করবে। অতিরিক্ত গরম পরলে গা ঢেকে না দিয়ে, কোলবালিশের মতো করেও দিতে পারেন।
বাবুকে যে ঘরে ঘুম দিয়েছেন, সে ঘরেই সালাত আদায় করার চেষ্টা করবেন। আলমিরা থেকে সুন্দর জায়নামাজটা নিবেন।
সারাদিন গায়ে পরে থাকা জামাটা পরিবর্তন করে, ভালো একটা পরিস্কার জামা পরবেন। তখনই দেখবেন আপনার মধ্যে একটা ফ্রেশনেস কাজ করছে।
যে ঘরে নামাজ আদায় করছেন, খুব বেশি অন্ধকার বা অধিক আলোকিত যেন না হয়। হালকা আলোয় ঘর একটু প্রশান্তিময় রাখবেন।
আপনাকে অনেক রাকাআত নামাজ আদায় করতে হবে, এমন কিন্তু নয়। আপনি ২-৪ রাকাআত নামাজ আদায় করুন কিন্তু অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে আদায় করুন। দেখবেন তৃপ্তি অনুভব করছেন।
হুট করে নামাজে দাড়িয়ে যাবেন না। একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ওযু করুন। তখন থেকে মনে একটু শান্তভাব নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। দুনিয়াবী সমস্ত চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন।
জায়নামাজে দাঁড়িয়ে, ১ মিনিট সময় নিন। দাঁড়িয়ে চিন্তা করুন, আপনি মহান সে সত্তার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর মাত্র অল্প কিছু রাত বাকি আপনার সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার। এরপর স্হির মস্তিষ্কে নামাজ শুরু করুন।
ছোট ছোট সূরা দিয়ে ২ রাকাআত করে নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু সিজদায় একটু দীর্ঘ সময় থাকার চেষ্টা করবেন। সিজদাহ যতো বেশি দীর্ঘ হবে, দেখবেন নামাজে মনোযোগ ততোই গভীর হচ্ছে।
দুয়া করার সময় একবার চিন্তা করে দেখুন, কতো গুনাহগার বান্দা আমরা। তবুও আল্লাহ তা’আলা তাঁর কতো নিয়ামত দিয়ে আমাদের পরিপূর্ণ করে রেখেছেন। “আল্লাহ, আল্লাহ গো” বলে একবার ডেকে দেখুন…. দু চোখ বেয়ে অশ্রু চলে আসবে…..
অশ্রু শিক্ত নয়নে আল্লাহর নিকট সমস্ত দুয়া পেশ করুন। নিজের গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নেয়ার এ উত্তম সুযোগ যেন আমাদের হাতছাড়া হয়ে না যায়।
মাঝে বাবু আবার উঠে গেলে, তাকে ঘুম পাড়ানোর সময় সূরা গুলো তিলওয়াত এর মতো করে পড়ে নেয়া যায়।
ছোট ছোট জিকির, দুয়া এবং নিজের মুখস্থ করা সূরা গুলোর একটা লিস্ট তৈরি করে, প্রতিদিন সে লিস্ট ধরে সব দুয়া পড়তে পারেন।
মাগরিবের পর থেকেই দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি চেকলিস্টের দুয়াগুলো পড়তে শুরু করে দিলে সাহরী পর্যন্ত শেষ করা যায়, ইন শা আল্লাহ।
ছোট বাবু নিয়ে অনেক মায়ের ক্লান্তিতে বারবার ঘুম চলে আসে। তাই কিছু সময় ঘুমিয়ে নিয়ে, পরবর্তীতে উঠে আবারও ইবাদাত করে নিতে পারেন।
অনলাইনে শেষ ১০ দিনের অনেক সাদাকাহ প্রজেক্ট আছে। সেখানে রাত ১২টার পর মোবাইল থেকেই দান করে দিতে পারেন। যাদের নিফাস চলমান, তারা বেশি পরিমাণে দান করতে পারেন।
যাদের বাবুরা একদম ঘুমায় না, একটু পরপর জেগে ওঠে। তারা বাবুকে পাশে নিয়েই কুরআন পড়ার চেষ্টা করতে পারেন। এটাও না পারলে জিকির করুন। তিলওয়াত করে সূরা পড়ুন। ছোট ছোট অনেক জিকির আছে যেগুলোর প্রতিদান অনেক বেশি, সেগুলো পড়ুন।
যাদের নিফাস চলছে, তারা দুয়া, জিকিরের পাশাপাশি আত্মীয়দের ফোন দিয়ে একটু করে খোঁজ নিতে পারেন। অবশ্যই গীবত বা খোশগল্প যেন না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
যে যতোটুকু পারবেন ততোটুক সময়কেই কাজে লাগাবেন। মনে রাখবেন বাচ্চা লালন-পালন করাও একটি ইবাদাত। তাই তাদের সাথে রাগারাগি করবেন না। বেশি পরিমাণে ইবাদাত করতে না পারলে মন খারাপ করারও কিছু নেই। আল্লাহ তা’আলা আপনার নেক নিয়তটাকেই দেখবেন, ইন শা আল্লাহ। তাই আমরা যেন আমাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করে, অল্প হলেও মনোযোগ সহকারে ইবাদাত করতে পারি সে চেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে।
পরিশেষে সবাই সবার জন্য দুয়া করবেন। মুমিন বান্দারা নিজের পাশাপাশি নিজ কওমের ভাই-বোনদের জন্যও দুয়া করে থাকেন।
আল্লাহ তা’আলা সকলের নামাজ, রোযা, দান-সাদাকাহ, যাকাত কবুল করে ক্ষমা দান করুক, আমীন।
ইশরাত জাহান তৃষা
প্রিনেটাল এসোসিয়েট ও পার্টিসিপ্যান্ট
রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …