মা হওয়ার পর মনের যত্ন
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date March 25, 2024
- Comments 0 comment
মারইয়ামের যখন জন্ম হয় আব্দুল্লাহর বয়র তখন ১৫ মাস। দেশের বাইরে একা হাতে কীভাবে দু’জনকে সামলাচ্ছি এমন প্রশ্ন প্রায়ই শুনি। এখন সময়ের সাথে কিছুটা রুটিনে চলে আসতে পেরেছি বলা যায়, আলহামদুলিল্লাহ্ । কিন্তু শুরুর দিকে ঠিক কিভাবে দিনগুলো কেটেছে ভাবলে নিজেরই অবাক লাগে।
হাসব্যন্ডের তখন থিসিস ডিফেন্সের সময়। আব্দুল্লাহ, মারইয়ামকে নিয়ে প্রায় দিনই রাতে ঘুম হতো না আমার। এর মাঝে পরিচিত একজন সকালের দিকে কোথাও যেতে বলছিল। ঘুম হয় না বলে এতো সকালে যেতে পারবো না বলেছিলাম।
‘একদিন একটু নাহয় কম ঘুমালেন।’ খুব সহজভাবে উনি বলেছিলেন।
সত্যিই কী এতোই সহজ কোথাটা! কোথায় যেন দেখেছিলাম সাধারন ৯টা-৫টা চাকুরির তুলনায় মায়েদের মানসিক চাপ ৯০% বেশী। আমরা মায়েরা নিজেরাও কী নিজেদের সাহায্য করতে কিছু করি?
মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের প্রতিদিনের কাজ, চিন্তাভাবনা, অনুভূতি সব কিছুর উপর প্রভাব ফেলে। আর তার সাথে যদি ছোট বাচ্চার মা হোন তাহলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব সরাসরি পড়বে আপনার সন্তানের উপর।
হয়তো মনে হতে পারে যে আমি নিজে আর কীভাবে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিবো। এটাও কী সম্ভব!। হ্যাঁ, ছোট ছোট কিছু কাজ আপনার মানসিক সুস্বাস্থ্য অর্জনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।
১। নিজেকে বুঝতে চেষ্টা করুনঃ প্রথমে নিজেকে বুঝুন। সন্তান জন্মের পর প্রথম ২-৩ সপ্তাহ সাধারণত মায়েদের বিষন্নতা কাজ করে। কোন কারণ ছাড়া কান্না পায়। শিশুর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে উদাসীনতা কাজ করে থাকে। অকারণ স্বামী স্ত্রী মধ্যে ঝগড়া হতে পারে। খেতে না চাওয়া বা পরিমাণে বেশী খেতে চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। কম ঘুমানো বা ঘুমের পরিমান হঠাৎ বেড়ে যায়। অকারণে দুশ্চিন্তা হয়। এগুলো সবই স্বাভাবিক। একে বেবি ব্লু বলে।
কিন্তু এসবই যদি ২-৩ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তবে তা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বেবি ব্লু এর সময়টা পার করবেন কীভাবে?
• জার্নাল লিখতে পারেন। নিজের অনুভূতিগুলো যেটুকু সম্ভব লিখতে চেষ্টা করবেন।
• পজেটিভ সেলফ-টক করবেন। এটা খুব খুব জরুরী। নিজেকে নিজে পজেটিভ করা বলবেন। আশেপাশে হয়তো অনেক মানুষ অনেক রকম কথা শোনাতে প্রস্তুত থাকবে সেসব কানে না নিয়ে নিজেকে নিজে ভালো কথাগুলোই বলবেন। কী করতে পারলেন না সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে সারাদিকে কী কী করলেন সেগুলো ফোকাস করবেন। সেটা যত সামান্যই হোক। আমার সময় আমি যদি সারাদিনে শুধু বাচ্চাদের ঠিক মত খাওয়াতে পারতাম তা-ই লিখে রাখতান। পজেটিভ সেলফ-টক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো লিখে বুঝানো আমার পক্ষে সম্ভব না।
• নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলুন। আপনার মা, বোন, বন্ধু বা স্বামী যে কারও সাথে মন খুলে কথা বলুন।
২। নিজের যত্ন নিনঃ নতুন মায়েরা সব কিছুর মাঝে নিজের যত্ন নিতেই ভুলে যান অনেক সময়। এটা করবেন না। নিজের যত্ন নিন। একটা রুটিন ঠিক করুন। দিনে অন্তত একবার হলেও চুলটা অবশ্যই আচরাবেন। নিজের গোসল, খাওয়ার যত্ন নিজ। মনে রাখবেন অক্সিজেন মাস্ক আগে নিজের পরতে হবে। আপনি ভালো থাকলে সন্তানের দেখাশোনা ঠিকমত করতে পারবেন। তাই নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে শারীরিক যত্ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার সাথে কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখবেন।
• নিজের যত্ন নিতে যে সময় আপনার ব্যয় করতে হচ্ছে তার জন্য কখনোই অপরাধবোধে ভুগবেন না। নিজের যত্ন নেয়া অনেকটা নিজেকে রিচার্জ করার মত। সব দায়িত্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে সময় তো নিতেই হবে।
• গ্রাটিচুড জার্নাল রাখতে পারেন। ছোট থেকে ছোট কিছুর জন্যও আল্লাহর কৃতজ্ঞত আদায় করুন।
• প্রচুর পানি খাবেন আর হ্যাঁ অবশ্যই একটু ১০/১৫ মিনিটের জন্য হলেও বাইরে হেঁটে আসবেন।
৩। মন ভালো রাখতে শরীরও ভালো থাকা চাইঃ নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও এক্সারসাইজ আপনার মন ভালো রাখতে পারে।
• ক্রেভিং মিটানোর চেয়ে খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে দৃষ্টি দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
• ডিপ ব্রিদিং অ্যাংজাইটি কমাতে সাহায্য করে। ডিপ ব্রিদিং এর ৪-৭-৮ টেকনিকটা বেশ কার্যকর। এটি কীভাবে করে? ১-৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে ধীরে নাক দিয়ে দম নিন। এবার দম ধরে রাখুন আর মনে মনে ১-৭ পর্যন্ত গুনুন। তারপর মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন আর ১-৮ পর্যন্ত গুনুন। এভাবে কয়েকবার করুন। কি রিল্যক্স লাগছে তো?
• দিনে অন্তত ১৫/২০ মিনিট হলেও এক্সারসাইজ করার চেষ্টা করুন। তা যত সামান্যই হোক। এসব করে কী হবে এমন ভাববেন না। এক্সারসাইজ অ্যাংজাইটি ডিপ্রেশন তো কমায়ই সাথে মুডও ঠিক করে দেয়।
৪। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে যাবেন নাঃ মারইয়ামের জন্মের পর আমি যে ভুলটা করেছি তা হলো সময় পাই না এই অজুহাতে মানুষের সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছিলাম। কেউ কল দিয়ে আমাকে পেতো না কারণ, ‘দুই বাচ্চা নিয়ে আমি সময় পাই না।’ সারাদিন হুলুস্থুল। আবার কাউকে কল দিলেও পাঁচ বার এটাই বুঝাতে হতো যে আমার বাসায় দুইটা বাচ্চা আছে আমার এমন হুলুস্থুলের মধ্যেই কথা বলতে হবে।
• আপনার চারপাশে যে মানুষগুলো আপনাকে পজেটিভ করা বলতে পারে তাদের সাথে একটু সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। সেটা হোক ফোনে বা সরাসরি।
• পুরনো কোনো বন্ধুকে হুট করেই কল দিয়ে দিন। এই কাজ শেষ করে করবো, এই সময় না ওই সময় এসব করবেন না। দেখবেন আপনার বন্ধুও এতে খুশিই হয়েছে।
মাতৃত্বের সময়টা কঠিন। নিজের সামান্য যত্ন নেয়া এই সময়টাকে স্বস্তির করে দিতে পারে।
সহায়তা নেয়া হয়েছে এই লিংক থেকে
নুসরাত জাহান মুন
দৌলা ইন্টার্ন, রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
রংধনু রঙের খেলনাগুলো
ছোটবেলায় আমাদের নিকট প্রকৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বস্তুটি ছিলো, তা হলো সাত রঙের রংধনু। কারণ অধিকাংশ সময় বৃষ্টির দেখা মিললেও, বৃষ্টির পরের রংধনুর দেখা মিলতো খুবই কম। তাই যে জিনিস খুব কম দেখা যায়, সে জিনিসের প্রতি আকর্ষণও থাকে সবচেয়ে …
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …