হঠাত বাসায় ডেলিভারি হয়ে গেলে কি করবেন?
- Posted by MNCC Moderator
- Categories Blog, Others
- Date June 1, 2024
- Comments 0 comment
এক্সিডেন্টাল হোমবার্থ হলে কি করবেন?
আমাদের পরিকল্পনায় থাকে হসপিটাল কিংবা midwife attended বার্থ। তবে নিয়তি সব সময় আমাদের পরিকল্পনা মত চলে না।
এ নিয়ে কয়েকবার এক্সিডেন্টাল হোম বার্থের অভিজ্ঞতা হল।
বিষয়টা হচ্ছে, এসব ডেলিভারি আসলেই সহজ। যেসব মায়েদের আশেপাশে মানুষের অভিজ্ঞতা নেই, উনাদেরও তেমন কষ্ট হয় নি সাহায্য করতে। তবে অবশ্যই প্রেগন্যান্সি লো রিস্ক হতে হবে।
সমস্যাটা হতে দেখেছি দুই জায়গায়।
এক, ভড়কে যাওয়া। হঠাৎ বাচ্চা বের হয়ে আসায় সবাই ঘাবড়ে যান। কিংকর্ত্যবিমূঢ় হয়ে যান অনেকে।
এই ভয়টা ছোঁয়াচে। মায়ের জন্য খুবই দুঃখজনক একটা পরিস্থিতি। সবাই এমন আচরণ করলে মা খুব অসহায়ও বোধ করেন।
অথচ এটা কিন্তু এমন আতঙ্কের বিষয় নয়। শর্ট পুশিং স্টেজ হলে বাচ্চার ওপর স্ট্রেস কম পড়ে, এবং এসব বাচ্চার সাধারণত রেসাসিটেশনের প্রয়োজন হয় না।
দ্বিতীয় সমস্যাটা হয় প্রসব পরবর্তী যত্নে। বাসাতেও সাধারণত যেটা করতে দেখেছি, তা হল বাচ্চাকে আলাদা করে অন্য কেউ কোলে নিয়ে রাখা। অথচ অবশ্যই অবশ্যই বাচ্চাকে সাথে সাথে বুকের ওপর রেখে দুধ খাওয়াতে হবে। এটা একটা মাস্ট। তা না করলে অক্সিটোসিন হরমোনের অভাবে মায়ের প্লাসেন্টার ডেলিভারি বিঘ্নিত হতে পারে বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে তাই বাচ্চাকে মার কাছে রেখে দুধ খাওয়ানোর স্টেপটা কোনোভাবেই হেলাফেলা করা যাবে না।
দেখা যাক এসব পরিস্থিতিতে কি করতে হবে:
১. মা চিৎ করে শুবেন না প্লাসেন্টা বের হওয়া পর্যন্ত।
২. দম আটকে পুশ করবেন না।
৩. প্লাসেন্টা রাখার জন্য একটা বালতি রাখবেন মায়ের পাশে।
৪. মা কোনোভাবেই সজোরে পুশ করবেন না, বরং নিয়ন্ত্রণে থেকে অল্প অল্প করে পুশ করেন।
৫. বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথে মায়ের বুকের ওপর রেখে দুধ খাওয়াতে হবে।
৬. কর্ড সাথে সাথে কাটবেন না। কর্ড সম্ভব হলে অপেক্ষা করে স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে কাটাবেন।
৭. তাও সম্ভব না হলে কর্ডের দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখবেন, কর্ড যখন মোটা, শক্ত এবং নীলচে রং থেকে অতি সরু, রংহীন এবং পাতলা হয়ে যাবে এবং স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে তখন বুঝবেন কর্ড কাটতে পারবেন। সম্ভব হলে আরো অপেক্ষাও করতে পারেন। একটা শক্ত এবং পরিষ্কার সুতো দিয়ে বাচ্চার নাভি থেকে ২-৩ সেমি দূরে কাছাকাছি দূরত্বে দুই স্থানে টাইট করে এমনভাবে বাঁধবেন যাতে মধ্যে দিয়ে কোনো অবশিষ্ট রক্ত চলাচল করতে না পারে। এরপর জীবাণুমুক্ত একটি ধারালো ব্লেড বা কাঁচি দিয়ে দুই সুতোর মধ্যবর্তী স্থানে কেটে দিন।
৮. ভার্নিক্স (বাচ্চার চামড়ায় পুরু সাদা আস্তরণ) ডলে উঠাবেন না। বাচ্চাকে আলতো করে মুছে ড্রাই করে একটা তোয়ালে বা কাপড়ে নিয়ে মার কাছে দেবেন।
৯. মায়ের নিচে প্রথমে ইউরিন ম্যাট বা পলিথিনের ওপর এমন absorbent কিছু কাঁথা বা কাপড় রাখতে হবে যা লিকুইড, ডিসচার্জ এবং রক্ত শুষে নিতে পারে। ডিসপোজেবল হলে ভাল।
কখনোই কোনো হেলথকেয়ার প্রভাইডারের উপস্থিতি ব্যতীত ডেলিভারি করানো উৎসাহিত করি না। তবে এমন পরিস্থিতিতে পরে গেলে কি করতে হবে এটা সকলের জেনে রাখা দরকার। কারণ প্রসব খুব খুব জীবনঘনিষ্ঠ একটা বিষয়। তাছাড়াও, মায়ের জীবন এর সাথে জড়িত।
ডেলিভারির সময় সম্ভব না হলে ডেলিভারির পরে অবশ্যই একজন হেলথকেয়ার প্রভাইডারকে দেখাবেন এবং মা বাচ্চা উভয়ের চেকাপ করাবেন। বিশেষ করে যদি ব্লিডিং বেশি মনে হয়, বা মায়ের মাথা ঘুরায় বা অন্ধকার দেখেন, তাহলে দেরি না করে হসপিটালে যেতে হবে।
সালসাবিল কাওসার
দৌলা,রৌদ্রময়ী স্কুল
Other post
You may also like
যৌথ পরিবারে নতুন মায়ের জন্য টিপস
১।অনেকগুলো একক পরিবার যখন একসঙ্গে থাকে তখন সেটা একটা প্রতিষ্ঠানের মত হয়ে যায়, সেখানে সবার আলাদা কিছু দায়িত্ব থাকে এবং ছকে বাঁধা কিছু নিয়মও থাকে। একক পরিবারে আমরা নিজের মত কিছু ফ্লেক্সিবিলিটি পাই যা যৌথ পরিবারে অনেক সময়ে পাওয়া যায় …
ছোট বাবুর মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য – আসুন সচেতন হই
খাদিজা তার এক মাস বয়সী মেয়ে আমিনাকে কোলে নিয়ে ঘরের মৃদু আলোয় বসে ছিলেন। রাত বাজে আড়াইটা। জানালা ভেদ করে চাঁদের মৃদু আলো ঘুমের কুয়াশা ভেদ করে তার মুখে এসে পড়ল। হঠাৎ থেমে থেমে আমিনার কান্নার শব্দ বাড়ে এবং কমে। …
ডিউ ডেটের পর আমার ৩য় নরমাল ডেলিভারির গল্প
১।আমার এবারের প্রেগন্যান্সিটা ফিজিক্যালি, মেন্টালি বেশি স্ট্রেস্ফুল ছিল। ৬মাস রেগুলার এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা মেডিক্যাল ডিউটি, বড় দুইটার দেখাশোনা, ইমোশনাল ব্রেক ডাউন – সব মিলিয়ে একটু কম যত্ন নিয়েছিলাম নিজের৷ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেসব দিন পার করে দিয়েছেন। আমার ইডিডি ছিল ২২/২/২৪। …