লো মিল্ক সাপ্লাই
প্রথম থেকে পর্যাপ্ত ব্রেস্টমিল্ক উৎপাদন করা একজন নতুন মায়ের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ । কতটুকু দুধ আসছে আর বাবু কতটুকু খাচ্ছে এটা কোন ভাবে পরিমাপ করা যায় না। এইজন্য মায়েরা কোনোভাবে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। সেই সাথে আশেপাশে শোনা যায় বাবু দুধ পাচ্ছে না, বাবু শুখিয়ে যাচ্ছে, দুধের পুস্টি কম এইসব কথাবার্তা মায়ের মনে আরও বেশি সন্দেহ সৃষ্টি করে। বাবু কি ঠিকভাবে খেতে পারছে? আমার কোন ভুল হচ্ছে না তো? বাচ্চাকে খাওয়াতে পারছিনা! আমি মনে হয় ব্যর্থ মা!!
এই সমস্যার সমাধান কোথায়???
প্রথমে বলে রাখি, আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা এবং পজেটিভ দৃস্টিভঙ্গি। কিছু মায়ের ক্ষেত্রে দুধ কম তৈরি হতে পারে এবং এর সংখ্যা খুবই কম।
মিল্ক সাপ্লাই কম হওয়ার কারনগুলোঃ
মায়ের স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হরমোনাল প্রবলেম।
লেবার এবং ডেলিভারির সময় এবং পরবর্তী তে ব্যবহৃত কোন ওষুধ যা সাপ্লাই কমিয়ে দেয়।
ডেলিভারির পর বাবুকে মায়ের থেকে দূরে এনআইসিওতে রাখা হলে।
দিনে যতবার খাওয়ানো দরকার তার চেয়ে কম খাওয়ানো হলে।
দুধ আসতে দেরী হলে।
ফোরসেপ বা ভ্যাকুয়াম ডেলিভারিতে বাবু কোন রকম ব্যাথা পেলে।
দুধ খাওয়ানোর সময় পজিশন এবং এটাচমেন্ট সঠিক না থাকা।
বাবুর টাং টাই সমস্যা।
প্রথম থেকে বাবুকে বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা দেওয়া শুরু করলে।
বাবু দীর্ঘসময়ের জন্য ঘুমিয়ে থাকা এবং এসময় উঠিয়ে না খাওয়ালে।
কীভাবে জানবো বাবু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কিনা??
এটা নিয়ে আমি আগেও পোস্ট করেছি। পোস্ট টা কমেন্ট এ দিয়ে দিচ্ছি। সাধারনত জন্মের পর পর বাবুর ওজন কিছুটা কমে যায়। এরপর ২ সপ্তাহের পর থেকে ওজন বাড়তে থাকবে। দুধ পেলে বাবু পর্যাপ্ত পি করবে। পি স্বচ্ছ হবে, কোন হলুদভাব থাকবে না। দিনে ৫-৬ টা ডায়পার লাগবে।
সাপ্লাই সংক্রান্ত ভুল ধারনাঃ
অনেক সময় সাপ্লাই পর্যাপ্ত থাকার পরও মায়ের মনে হতে পারে বাবু হয়ত ঠিকমত দুধ পাচ্ছে না। আপনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন কিনা মিলিয়ে নিন।
ব্রেস্ট সব সময় নরম থাকে, লিক হয় না।
বাবু মায়ের দুধ খাওয়ার পরও ফর্মুলা দেওয়া হলে খায়।
বাবু সারাক্ষণই খেতে চায়। খাওয়ানোর পর শুইয়ে দিলে আবার উঠে খেতে চায়। অনেক সময় ধরে খেতে থাকে। ( এটা বাবুর স্বাভাবিক আচরণ। কিছুসময়ের জন্য এরকম করতে পারে।)
রাতে বার বার উঠে খেতে চায়।
পাম্প করলে যথেষ্ট দুধ পাওয়া যায় না।
( বাবুর সাথে মায়ের ইমোশনাল এটাচমেন্ট থাকে। যেটা পাম্পের সাথে থাকে না। তাই পাম্প করলে সবসময় যথেস্ট সাপ্লাই পাওয়া যায় না)
কিভাবে লো মিল্ক সাপ্লাই ঠিক করা যায়?
স্কীন টু স্কীন কন্টাক্ট – ডেলিভারির পর থেকে বাবুকে মায়ের বুকের সাথে লাগিয়ে রাখা। এতে করে মিল্ক উৎপাদনের হরমোন তৈরি হয় এবং ফ্লো ভালো হয়।
কিছু সময়ের জন্য নিজে বিশ্রাম নেওয়া, টেনশন মুক্ত হয়ে একটু রিলাক্স করা৷কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পারেন, লাইট অফ করে, উপযুক্ত পরিবেশে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে পারেন। যিকির করতে পারেন, ইসতেগফার করতে পারেন এবং নিজের ভালো পজেটিভ কথাগুলো চিন্তা করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে পারেন। মোটকথা যা করলে আপনার মন শান্ত হয়।
২৪ ঘন্টায় বাবু ৮-১২ বার বা তার বেশি বার দুধ খেতে পারে। এই খাওয়ানোর মাঝখানে সময়গুলোতে পাম্প করতে পারেন। বুকের দুধ তৈরির পুরো ব্যাপারটা একটা ফুড ফ্যাক্টরির মত। ডিমান্ডের উপর প্রোডাকশন এবং সাপ্লাই নির্ভর করে। যত ডিমান্ড হবে সাপ্লাইও সেই সাথে বাড়বে। ডিমান্ড কমে যাবে প্রোডাকশন ও কমবে। বার বার বুক খালি করলেই বেশী দুধ তৈরি হবে। আল্লাহ সিস্টেম টাই এত সুন্দর করে দিয়েছেন।
সঠিক পাম্প মেশিন কিনতে হবে, যাতে কোনরকম ব্যাথা না পান।
বিভিন্নরকম ম্যাসাজ আছে যা মিল্ক ফ্লো বাড়াতে সাহায্য করে । এজন্য বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফাউন্ডেশন বা ল্যাকটেশন কনসাল্টেশন সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন।
ব্রেস্টমিল্ক সাপ্লাইয়ের ব্যাপারটা সরাসরি বাবুর খাওয়ার সাথে জড়িত। ডিমান্ডের উপর সাপ্লাই আসে। আর দুধের নিউট্রিয়েন্টগুলো আসে মায়ের শরীর থেকে। এজন্য ব্রেস্টফিডিং এর সময় মাকে প্রেগন্যান্সির মতই খাওয়া দাওয়া করতে হবে। ব্যালেন্সড ডায়েট মানে,পরিমাণমত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে।
বেশ কিছু খাবার আছে যা মিল্ক ফ্লো বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ব্রেস্টফিডিং মায়েরা এই খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।যেমনঃ
ওটস
লেটুস, পালংশাক, ব্রোকলি, সবুজ শাক সবজী
কলার মোচা
মেথি
মৌরি
রসুন
ছোলা
তিল,কালোজিরা
তিসি
আদা
সজনে
এইসব হার্বের মিক্স টি, ল্যাকটেশন কুকিজ ও মিল্ক সাপ্লাই বাড়ায়।
যখন ফর্মুলা ছাড়া উপায় নেই!
তারপরও যদি সাপ্লাই না বাড়ে সুবিধা হলে একজন দুধ মায়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মায়ের দুধে যে অসাধারণ উপাদানগুলো থাকে সেটা ফর্মুলাতে থাকে না। অনেক সময় বাবুর ওজন ঠিকভাবে না বাড়লে ডাক্তার ফর্মুলা সাজেস্ট। ফর্মুলা দেওয়ার প্রয়োজন হলেও পাশাপাশি ব্রেস্টফিডিং চালিয়ে যেতে হবে এবং ফ্লো বাড়ানোর চেস্টা করে যেতে হবে। সবধরনের চেস্টা চালিয়ে গেলে হয়ত ৬ সপ্তাহের মত সময় লাগতে পারে।
ফারইয়াব হাসান
Rodromoye doula intern
Amani birth educator and doula in training